জালেমের সহযোগী-সমর্থকও জালেম

Daily Inqilab মাওলানা বুরহানুদ্দীন বিন সা’দ

১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

কাউকে সাহায্য-সহযোগিতা করারও ইসলামী দৃষ্টিকোণ ও মানদ- রয়েছে। যে কেউ কোনো কাজের সমর্থন চাইলেই বা যে কারো কোনো কাজ নিজের মনমতো হলেই নির্দ্বিধায় তার সাথে সহমত পোষণ ও সহযোগিতা করা যায় না।

কারণ, কুরআন-সুন্নাহর ভাষ্য হলো, সমর্থনকারীর ওপরেও কাজের দায় বর্তাবে। সহযোগিতাকারীও সওয়াব ও গুনাহের ভাগিদার হবে। কাজেই প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য অন্যের কেবল কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কাজেই শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় সহযোগিতা করা। যেন অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে গিয়ে শরীয়ত লঙ্ঘন করা না হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরে সহযোগিতা করো। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। (সূরা মায়েদা : ০২)।

উক্ত আয়াতের শিক্ষা এই যে, কোনো বিষয়ে অন্যকে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য শর্ত হলো, যে বিষয়ে আমি সহযোগিতা করছি, তা নেক কাজ ও তাকওয়ার বিষয় হতে হবে। এবং জালেমের পক্ষাবলম্বন করা ও সমর্থন করা বড় অন্যায় ও গুনাহের কাজ। শরীয়তের নির্দেশনা হলো, জালেমকে যথাসম্ভব জুলুম থেকে বাধা দেওয়া। কমপক্ষে অন্তর থেকে ঘৃণা করা। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তোমরা জালেমদের দিকে একটুও ঝুঁকবে না, অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদেরও স্পর্শ করবে এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো রকমের বন্ধু লাভ হবে না। আর তখন কেউ তোমাদের সাহায্য করবে না। (সূরা হূদ : ১১৩)।
এ আয়াতের মধ্যে সেসব লোকের জন্য বড় শিক্ষার উপকরণ রয়েছে, যারা জালেমদের প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে অন্যায় সমর্থন দিয়েছেন। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের জাহান্নামের শাস্তির ধমকি দিয়েছেন। ‘লা তারকানু’ শব্দটির ব্যাখ্যায় সালাফে সালেহীন জালেমের সমর্থনের বেশ কিছু দিক বলেছেন : ১. জালেমের সঙ্গে সখ্যতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এমনিতেই ইসলামের মুআলাত ও বন্ধুত্বের মানদ- হল, ঈমান ও তাওহীদ। ঈমান ও তাওহীদকে বিসর্জন দিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কোনো দর্শন ও মতাবাদকেন্দ্রিক ঐক্য ও বন্ধুত্ব গড়ার কোনো সুযোগ নেই।

২. জালেমের জুলুম ও অন্যায়-অবিচারকে পছন্দ করা ও তার প্রতি অন্যায় পক্ষপাত লালন করা। ৩. প্রতিবাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জালেমের জুলুমের প্রতিবাদ না করা; বরং এর ওপর মৌনতা অবলম্বন করা। ৪. জালেমের সংশ্রব গ্রহণ করা ও তার ব্যাপারে নমনীয়তা অবলম্বন করা। ৫. বাহ্যিক বেশভূষায় ও জীবনাচারে জালেমের অনুসরণ করা। তাকে অনুকরণীয় হিসেবে গ্রহণ করা। এ আয়াতে জালেমের সঙ্গে শুধু সখ্যতা ও সম্পর্ককেই নিষেধ করা হয়নি; বরং জালেমের ব্যাপারে সামান্যতম শিথিলতাকেও নিষেধ করা হয়েছে। (দ্র. তাফসীরের তবারী ৭/১২৩-১২৪; তাফসীরে কুরতুবী ৯/৭২; তাফসীরে মাযহারী ৪/৪৩০; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৪/৬৭২-৬৭৩)।

শেষ কথা হলো, যারা জালেমকে জুলুমের কাজে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও সমর্থন করেছে তাদের উচিত, নিজেদের কৃতকর্মের ওপর অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে খাঁটি দিলে তওবা করা, মাজলুমের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং হক ফিরিয়ে দেওয়া। অন্যথায় তাদের জন্যও অপেক্ষা করছে দুনিয়া-আখেরাতের লাঞ্ছনাকর শাস্তি।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-২
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-১
জালেমের সামনে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন যারা
আল কুরআনে মানব হত্যার শাস্তি-২
আরও

আরও পড়ুন

নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা

ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা

জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে মা-বোনদের খুন ও সম্ভ্রমহানির সাথে জড়িত ছিল: হাফিজ ইব্রাহিম

জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে মা-বোনদের খুন ও সম্ভ্রমহানির সাথে জড়িত ছিল: হাফিজ ইব্রাহিম

সীমান্তে উসকানিদাতাদের চরম মূল্য দিতে হবে: আখতার হোসেন

সীমান্তে উসকানিদাতাদের চরম মূল্য দিতে হবে: আখতার হোসেন

সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাওয়ার নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ

সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাওয়ার নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ

ইস্তাম্বুলে শুরু হলো ফিলিস্তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ফোরাম 'তাওয়াসুল'

ইস্তাম্বুলে শুরু হলো ফিলিস্তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ফোরাম 'তাওয়াসুল'

বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে : লে. কর্নেল কিবরিয়া

বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে : লে. কর্নেল কিবরিয়া

যুদ্ধবিরতির প্রতীক্ষায় গাজার ফিলিস্তিনিরা, নিহত ৪৭ হাজার ছুঁই ছুঁই

যুদ্ধবিরতির প্রতীক্ষায় গাজার ফিলিস্তিনিরা, নিহত ৪৭ হাজার ছুঁই ছুঁই

এক সপ্তাহে মসজিদে নববীতে ৫৪ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

এক সপ্তাহে মসজিদে নববীতে ৫৪ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী

ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী

‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির

‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির

নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০

নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০

লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম

চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম

বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না: শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না: শামসুজ্জামান দুদু

মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক

মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা